সাঁওতাল তরুণীদের রঙিন সাজে মুখরিত দিনাজপুরের বউ মেলা

অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ০৪ অক্টবার ২০২৫ | সময়ঃ ০৩:১২
photo

 

মোকছেদুল মমিন মোয়াজ্জেম,দিনাজপুর প্রতিবেদক:-দিনাজপুরের বীরগঞ্জে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বউ মেলা। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) দিনব্যাপী গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বসে এই অনন্য আয়োজন, যা শুধু জীবনসঙ্গী খোঁজার জায়গা নয়, বরং এক মিলন মেলায় রূপ নেয়।

 

প্রায় দুই শতাব্দী ধরে শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর পরদিন কোনো প্রচার ছাড়াই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা এখানে ভিড় জমায়। স্থানীয়ভাবে,বাসিয়াহাট বা বউ মেলা নামে পরিচিত এ আয়োজন এখন সময়ের পরিবর্তনে পরিচিত হচ্ছে মিলন মেলা নামে।

 

আদিবাসী সাঁওতাল তরুণীরা রঙিন শাড়ি, কপালে টিপ, হাতে চুড়ি পরে অপরূপ সাজে হাজির হন। তরুণ-তরুণীর চোখাচোখি, আলাপচারিতা, এরপর অভিভাবকের কাছে জানানো, সব মিলেই শুরু হয় নতুন সম্পর্কে বাঁধা। আগে আলাপ হলে পরের বছর মেলায় তাদের বিয়ে আয়োজন হতো। যদিও এখন আর সে ধারা নেই, তবুও অনেকেই এখানে সঙ্গী খুঁজে পান।

 

মেলাকে ঘিরে বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। ৬নং নিজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ, ১০নং মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ এবং বীরগঞ্জ আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমিতির নেতা জোসেফ হেমরম।

 

প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ মনজুরুল ইসলাম মনজু। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নিজপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস, মোহনপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান চৌধুরী শাহিন, কারিতাসের আঞ্চলিক পরিচালক রবি মার্ডি এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক মনোজ কুমার রায় প্রমুখ।

 

এসময় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা ঢোল, মন্দিরা, কাঁসর, কাড়া ও হারমোনিয়ামের তালে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে অতিথিদের স্বাগত জানান।

বউ মেলা উপলক্ষে শুধু দিনাজপুর নয়, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, জয়পুরহাট ও নওগাঁ থেকেও অসংখ্য মানুষ আসেন।বিদ্যালয়ের মাঠ ও পুরো বাজার এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। দেড় সহস্রাধিক দোকানে বসে জিলাপি, নিমকি, পিঠা, ফুচকা, চটপটি, অলংকার, খেলনা, গৃহস্থালি সামগ্রী, মাটির জিনিসপত্রসহ নানা পণ্যের পসরা।

 

চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস বলেন, আগে এ মেলায় পছন্দ হলে পরিবারকে জানানো হতো এবং পরের বছর বিয়ের আয়োজন করা হতো। এখন আর সে নিয়ম নেই, তবে ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এ আয়োজন হয়ে আসছে।

আদিবাসী নেতা জোসেফ হেমরম জানান, এই মেলা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের শতবর্ষের ঐতিহ্য। এখন এটি সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জের বউ মেলা তাই শুধু জীবনসঙ্গী খোঁজার আয়োজন নয়, বরং ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আনন্দে ভরপুর এক মহামিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

শেয়ার করুন