অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১৮ অক্টবার ২০২৫, সময়ঃ ০২:১০
৭১ ভিশন ডেক্স:-যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার ফোনালাপে ‘অসাধারণ অগ্রগতি’ হয়েছে এবং ইউক্রেন ইস্যুতে তারা হাঙ্গেরিতে মুখোমুখি আলোচনায় সম্মত হয়েছেন। এই অবস্থায় তিনি ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
গত অগাস্টের পর এই প্রথম ফোনে কথা বললেন তারা। ট্রাম্প দাবি করেছেন, পুতিনের সাথে এই ফোনালাপটি ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে। ওয়াশিংটন ও মস্কোর প্রতিনিধিরা আগামী সপ্তাহে দেখা করবে বলে জানান তিনি। ট্রাম্প বুদাপেস্টে পুতিনের সাথে তার বৈঠকের তারিখ নিশ্চিত করেননি। ক্রেমলিন জানিয়েছে যে ‘অত্যন্ত স্পষ্ট এবং বিশ্বাসযোগ্য’ ফোনালাপের পরে ‘অবিলম্বে’ শীর্ষ সম্মেলনের কাজ শুরু হবে। এই আলোচনা এমন এক সময় হলো, যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আজ শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং ট্রাম্প ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন, যা রাশিয়ার অভ্যন্তরে গভীরভাবে আঘাত হানতে সক্ষম।
ফোনালাপের পর নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হলে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে’ তারা দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা করেছেন। তিনি জানান, দুই দেশের ‘উচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টারা’ আগামী সপ্তাহে একটি অনির্দিষ্ট স্থানে বৈঠক করবেন, যেখানে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ট্রাম্প আরও বলেন, শুক্রবার তিনি পুতিনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জেলেনস্কিকে অবহিত করবেন। ‘আমি বিশ্বাস করি, আজকের ফোনালাপে বড় অগ্রগতি হয়েছে,’ বলেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, ‘আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই’ পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠক হতে পারে। পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আমাদের টমাহকের মজুদ শেষ করতে পারি না। আমাদেরও এগুলো দরকার... তাই আমি জানি না, আমরা কী করতে পারি।’
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘বুদাপেস্টে পরিকল্পিত বৈঠক শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য দারুণ খবর।’ তিনি আরও বলেন, ‘শান্তির জন্য ধৈর্য, শক্তি ও বিনয় প্রয়োজন। ইউরোপকে তার অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। অহংকার ও যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালার পরিবর্তে আমাদের রাশিয়ার সঙ্গে সংলাপে যেতে হবে। কেবল সংলাপই আমাদের মহাদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে।’
রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সংযোগ টানেল নির্মিত হতে পারে ৮ বছরেই : বেরিং স্ট্রেইট অতিক্রম করে রাশিয়া ও আলাস্কাকে সংযুক্ত করার জন্য একটি টানেল তৈরি করতে আট বছরেরও কম সময় লাগতে পারে, যার খরচও ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে না বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক বিশেষ দূত এবং রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ) এর সিইও কিরিল দিমিত্রিভ বলেছেন।
‘পুতিন-ট্রাম্প টানেলের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, আমেরিকা এবং আফ্রো-ইউরেশিয়াকে সংযুক্ত করার কথা কল্পনা করুন - ঐক্যের প্রতীক ৭০ মাইল দীর্ঘ একটি সংযোগ। গতানুগতিক খরচ ৬৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি, কিন্তু বোরিং কোম্পানি (এলন মাস্ক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত টানেল নির্মাণ পরিষেবা এবং সরঞ্জাম সংস্থা) প্রযুক্তি এটিকে ৮ বিলিয়নে নীচে নামিয়ে আনতে পারে। আসুন একসাথে একটি ভবিষ্যত গড়ে তুলি!’ তিনি এক্স সোশ্যাল নেটওয়ার্কে লিখেছেন। তার ভাষায়, রেলপথ এবং কার্গো লিঙ্ক সহ টানেলটি যৌথ সম্পদ অনুসন্ধানের সূচনা করবে। একই সাথে, তিনি বলেছেন, যৌথ মার্কিন-রাশিয়া প্রকল্পগুলি কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। ‘আরডিআইএফ ইতিমধ্যেই প্রথম রাশিয়া-চীন রেলপথ সেতুতে বিনিয়োগ করেছে এবং নির্মাণ করেছে। মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মহাদেশগুলিকে আরও বেশি কিছু করার এবং সংযুক্ত করার সময় এসেছে। রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সংযুক্ত করার সময় এসেছে,’ দিমিত্রিভ বলেন।
মোদির সাথে ট্রাম্পের রাশিয়ার তেল নিয়ে কোন কথাই হয়নি : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে বুধবার (১৫ অক্টোবর) ফোনে আশ্বাস দিয়েছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে ছাড়মুল্যে তেল কেনা বন্ধ করবে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, ওই দিন দুই নেতার মধ্যে কোনো ফোনালাপ হয়নি।
ভারতীয় মুখপাত্রের মতে, ভারতের তেল ও গ্যাস আমদানি নীতি সম্পূর্ণভাবে দেশের ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা এবং শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পরিচালিত হয়।
বুধবার ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে বলেন, “আমি খুশি নই যে ভারত রাশিয়ার তেল কিনছে।
মোদি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, শিগগিরই তারা রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করবে। এটি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সমাধান সহজ করবে।” ট্রাম্প আরও বলেন, “এটি একটি বড় পদক্ষেপ। এখন আমরা চাইব চীনও একই করবে।” তার বক্তব্যে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী মুক্তির মধ্যস্থতা বিষয়ক পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ ছিল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের শক্তি নীতির মূল লক্ষ্য হলো স্থিতিশীল শক্তি মূল্য এবং নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিত করা।
মুখপাত্র বলেন, “আমাদের আমদানি নীতি সম্পূর্ণভাবে এই উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। আমরা আমাদের শক্তি উৎসের বৈচিত্র্য আনছি এবং বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী সমন্বয় করছি।” তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শক্তি সহযোগিতা সম্প্রসারণের চেষ্টা চলমান, যা গত দশকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছে।
সূত্র : এএফপি, বিবিসি, তাস, ডন।
© 71 Vision ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সতর্কতাঃ অনুমতি ব্যতীত কোন সংবাদ বা ছবি প্রকাশ বা ব্যবহার করা যাবে না।