অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১০ অক্টবার ২০২৫, সময়ঃ ০৩:৫৫
৭১ ভিশন ডেস্ক:-মানুষের জীবনে একদিকে রয়েছে সত্য, ন্যায়, সততা ও তাকওয়ার উজ্জ্বল দীপশিখা; অন্যদিকে রয়েছে পাপ, অন্যায়, লোভ আর কামনার অন্ধকার। মানুষ যখন আলোর পথে হাঁটে তখন সভ্যতা সমৃদ্ধ হয়, মানবতা উজ্জ্বল হয়।আর মানুষ যখন পাপের অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়, তখনই দেখা দেয় ধ্বংস, বিপর্যয় ও মানবতার অবক্ষয়। তাই এ কথা অবলীলায় বলা যায়, মানুষের প্রকৃত মুক্তি নিহিত রয়েছে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকায়, আর আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে গড়ে তোলায়।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে আমরা সহজ কৌশলে একটি গুনাহমুক্ত জীবন গড়ে তুলতে পারি? কোরআন, হাদিস, ইসলামী মনীষীদের উপদেশ এবং আধুনিক বিজ্ঞান এ ব্যাপারে আমাদের এক অনন্য পথরেখা প্রদান করেছে। সেগুলো হচ্ছে—এক. তাওবা যা পাপমুক্তির প্রথম দরজা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আদমসন্তানরা সবাই ভুল করে, আর উত্তম ভুলকারী তারা, যারা তাওবা করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৯৯)
তাওবা মানুষের জন্য আল্লাহর দান করা মহামূল্যবান উপহার। এটি শুধু আত্মাকে গুনাহ থেকে পরিশুদ্ধই করে না, বরং মানুষের ভেতরে নতুন এক উদ্যম ও আত্মবিশ্বাস জাগায়।
মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও অপরাধ স্বীকার এবং পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞা মানসিক চাপ কমায়, অপরাধবোধ হ্রাস করে এবং আত্মার ভেতর নতুন এক আলো জ্বালায়।
দুই. নামাজ যা গুনাহ থেকে রক্ষার ঢাল : মহান আল্লাহ তাআলা বলেন; ‘নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীলতা ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে।(সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)
প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ আদায় মানে মানুষের জীবনে আল্লাহর উপস্থিতি ও স্মরণকে নতুন করে জাগ্রত করা। প্রতিটি সিজদা হলো বিনয় শেখার প্রশিক্ষণ, প্রতিটি তাকবির হলো গুনাহ থেকে দূরে থাকার প্রতিজ্ঞা।
তিন. সৎসঙ্গ গ্রহণ : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতির (দ্বীন ধর্মের) অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩৩)
সমাজবিজ্ঞানের গবেষণাও বলছে, মানুষের আচরণ ও অভ্যাস তার পরিবেশ দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়। তাই গুনাহমুক্ত জীবন গড়তে চাইলে সৎসঙ্গ ও নেক পরিবেশ তৈরি করা অপরিহার্য।
চার. বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত : মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই কোরআন এমন পথের দিকনির্দেশ করে, যা সর্বাধিক সঠিক।
’ (সুরা : ইসরা, আয়াত : ৯)
কোরআন হলো আলোর উৎস। এর প্রতিটি আয়াত অন্তরকে ধৌত করে, চরিত্রকে পরিশুদ্ধ করে। মনীষীরা বলেন, যে হৃদয় কোরআনের তেলাওয়াত থেকে দূরে থাকে, তা শুকনো জমির মতো; আর যে হৃদয়ে কোরআন প্রবাহিত হয়, তা বসন্তের বাগানের মতো সজীব হয়ে ওঠে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কোরআন পাঠ মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি করে এবং আত্মাকে ইতিবাচক শক্তি জোগায়।
পাঁচ. নফল ইবাদত ও সুন্নাহ পালন : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন ‘আমার বান্দা নফল আমল দ্বারা ক্রমাগত আমার নিকটবর্তী হতে থাকে, অবশেষে আমি তাকে ভালোবাসতে থাকি।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)
নফল নামাজ, রোজা, দান, রাতের তাহাজ্জুদ; এসব ছোট ছোট আমল বান্দাকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়। বিজ্ঞানও বলছে, সৎকাজের মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কে ডোপামিন ও সেরোটোনিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা সুখ, প্রশান্তি ও ইতিবাচক শক্তি জাগায়।
ছয়. আত্মসমালোচনা ও আত্মপর্যালোচনা : হাসান আল-বসরি (রহ.) বলেছেন, ‘তুমি নিজের হিসাব নাও মৃত্যুর আগে; কারণ কিয়ামতের দিন তোমার হিসাব নেওয়া হবে।’
প্রতিদিনের শেষে কিছু সময় নিজের ভুলত্রুটি পর্যালোচনা করলে মানুষ দ্রুত সংশোধন হতে পারে। মনোবিজ্ঞানে একে selfreflection বলে। এটি মানুষকে উন্নতির পথে ঠেলে দেয় এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন পরিকল্পনায় সাহায্য করে।
গুনাহমুক্ত জীবন কোনো কাল্পনিক স্বপ্ন নয়, বরং সচেতন প্রচেষ্টা ও আল্লাহর সাহায্যের মাধ্যমে এটি সম্ভব। তাওবা, নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, সৎসঙ্গ, নফল আমল, আত্মপর্যালোচনা ও সুস্থ জীবনধারা—এই কৌশলগুলো যদি জীবনের অঙ্গ হয়ে যায়, তবে মানুষ পাপের অন্ধকার থেকে মুক্তি পেয়ে তাকওয়ার আলোয় আলোকিত হবে।
সর্বোপরি এ কথা বলা যায়, গুনাহমুক্ত জীবনের সহজ কৌশল হলো আল্লাহর স্মরণ, তাঁর আনুগত্য ও আত্মসংযমের অনুশীলন। এই পথেই নিহিত রয়েছে মানবতার মুক্তি, সমাজের শান্তি এবং পরকালের অনন্ত সাফল্য।
মাহন আল্লাহ আমাদের সবাইকে গুনাহমুক্ত জীবন সাজানোর তাওফিক দান করুন।
লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া ইমদাদিয়া মুসলিম বাজার মিরপুর।
কালের কণ্ঠ
© 71 Vision ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সতর্কতাঃ অনুমতি ব্যতীত কোন সংবাদ বা ছবি প্রকাশ বা ব্যবহার করা যাবে না।