দুই বোনের প্রতারণার ফাঁদে সহকর্মীরা


স্টাফ রিপোর্টার:-  বরিশাল বাবুগঞ্জ উপজেলার '৫৮ নং মাধবপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়' থেকে অনিয়মের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া সহকারী শিক্ষিকা নুরুন নাহার ও তার বোন লিপির দুর্নীতির রোষানলে পড়েছে তাদের প্রায় এক ডজন সহকর্মী সহ শুভাকাঙ্ক্ষী। নুরুন নাহার একাধিক এনজিও ও ব্যাংক থেকে লোন উত্তোলন বা জামিনদাতা হয়ে যারা উপকার করেছেন তারাই এখন গ্যাঁড়াকলে। দুর্নীতি পূর্বক আয় করা দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের লাখ লাখ টাকা নিয়ে দুই বোন দেশ ছেড়ে চলে যাবার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানা গেছে।  

মাধবপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন নেসা খানম বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অনেক আগেই সহকারী শিক্ষিকা পদ থেকে নুরুন নাহার সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন।

সরকারি নিয়ম মেনে ২০২২ সালের ১২ জুন নুরুন নাহার সোনালী ব্যাংক বাবুগঞ্জ খানপুরা শাখা থেকে ৮ বছর মেয়াদে ১৪ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এই ঋণের জামিনদাতা হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন নুরুন নাহারের সহকর্মী '৫৩ নং পূর্ব রহমতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়' এর সহকারী শিক্ষিকা সৈয়দা রাশিদা বেগম। সময় মতো কিস্তি পরিশোধ না করায় নূরুন নাহারকে ব্যাংক কর্তৃক ২০২৫ সালের ১৪ আগস্ট বকেয়া টাকা পরিশোধের চূড়ান্ত নোটিশের পাশাপাশি জামিনদাতা হিসেবে স্বাক্ষরকারী সহকারী শিক্ষিকা সৈয়দা রাশিদা বেগমকেও বাকি টাকা পরিশোধ করার জন্য নোটিশ প্রেরণ করেছেন ব্যাংক ম্যানেজান মো. মশিউর রহমান।

অফিসের নিয়ম মেনে নুরুন নাহার নিজেই কাশিপুর ব্যাক অফিস থেকে ৬ লাখ টাকা এবং বাবুগঞ্জ রহমতপুর কাল্ব্ নামক এনজিও থেকে প্রায় ৭ লাখ টাকা লোন উত্তোলন করেছেন। অন্যদিকে, চেক দিয়ে নুরুন নাহার তার সহকর্মী শেখ মো. শামছুল আরেফিন ওরফে ফুয়াদের কাছ থেকে নিয়েছে নগদ ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। সময়মতো টাকা না পেয়ে নুরুন নাহার কে আসামি করে ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি চেক প্রতারণা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ফুয়াদ। অপর এক সূত্র জানায়, নুরুন নাহারের বিরুদ্ধে তার মেজো বোন লিজা আক্তারও একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মাধবপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মরিয়ম আক্তার বলেন, প্রায় এক বছর পূর্বে হঠাৎ একদিন আমার বাসায় নুরুন নাহার ও তার বোন লিপি এসে ৫ লাখ টাকা ধার চায়। পরে তাদের নামে থাকা একটি "ডিপিএস" ভেঙে এ টাকা পরিশোধ করার ওয়াদা দেন। উপায়ান্তর না পেয়ে একটি এনজিও থেকে আমি ৫ লাখ টাকা লোন তুলে দিই। শর্তানুযায়ী শুরুতে নুরুন নাহার এনজিও কিস্তি পরিশোধ করলে এখন দিচ্ছে না। এখনও প্রায় আড়াই ২ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। যেহেতু লোন আমার নামে তোলো, তাই বাধ্য হয়ে আমারই কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। আমার মতো অনেক ভুক্তভোগী রয়েছে।

একই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা দেবজানি সরকার বলেন, নুরুন নাহারের নামে আগে লোন নেয়া আছে। তাই তিনি লোন উত্তোলন করতে পারছেন না। এমন নানা সমস্যার কথা বলায় শর্তানুযায়ী আমি ৫ লাখ টাকা লোন উঠিয়ে দেই। প্রথমে নুরুন নাহার কিস্তি টানলেও পরে দেয়নি। এনজিওতে সুদের হার বেশি থাকায় আমি নিউ উদ্যোগে ৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা এককালীন পরিশোধ করে দেই। কিন্তু নুরুন নাহার এখন পর্যন্ত আমাকে সেই টাকা দেয়নি। আমার মতো অনেকেই নুরুন নাহার কর্তৃক প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

অপর সহকারী শিক্ষিকা তানজিন রহমানও একইভাবে নুরুন নাহারকে এনজিও থেকে লোন উঠিয়ে দেওয়ার কথা শোনা গেলেও বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, প্রথমে একটি লেনদেন ভালো করায় পরবর্তীতে নুরুন নাহার ও তার বোন সমস্যার কথা বলে টাকা ধার চায়। তখন আমি এনজিও থেকে ৪ লাখ টাকা লোন উঠিয়ে দেই। প্রথমে কয়েকটি কিস্তি পরিশোধ করলেও পরে নুরুন নাহার আর দেয়নি। এখন বাধ্য হয়ে নিজের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। শুধু আমিই নয় নুরুন নাহার এভাবে তার পরিচিত অনেকের মাধ্যমে লোন উঠিয়ে নিয়েছে।

মুঠোফোনে নুরুন নাহার বলেন, পারিবারিক সমস্যার কারণে অনেক টাকার প্রয়োজন ছিল। তাই বিশ্বস্তদের কাছে থেকে এমন করে টাকা নেয়া হয়েছে। তবে কেউই প্রতারিত হবেন না। আর আদালতে চলমান মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আর দেশ ছেড়ে যাবার কথা গুজব বলে জানান তিনি।

তবে অসমর্থিত এক সূত্র জানায়, বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের মেয়ে নুরুন নাহার ও লিপি। বাবুগঞ্জ উপজেলার কৃষি অফিসে চাকরি করতেন লিপি। তাদের মামা বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। 

 

দালালের সহযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতের বর্ডার (বাংলা ভাষা ব্যবহৃত অঞ্চল) এলাকা থেকে টাকার বিনিময় ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করে প্রবাসী স্বামীর কাছে চলে যাবে। নুরুন নাহারের প্রায় সিংহভাগ কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও তিনি তার বোন লিপির কিছু কার্যক্রমের জন্য থমকে আছেন। কারণ, পরে দুই বোন একত্রে বাংলাদেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে কারণে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, মা-বাবা মারা যাবার পর ভাই-বোনদের সাথে সম্পর্ক ভালো ছিল না নুরুন নাহার ও নার্গিস আক্তার লিপির। তবে সব বিষয়ে এই দুই বোন একত্রে সিদ্ধান্ত নিতেন। তারা বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের মেয়ে।

 

 বাবুগঞ্জ কৃষি অফিসে চাকরি করতেন লিপি। ব্যক্তিগত জীবনে করেছেন একাধিক বিয়ে। থেমে নেই নুরুন নাহারও। বিয়ে করা এবং ছাড়া দুই বোনের ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়েছে। ভোলায় থাকাকালীন অবস্থায় সহকর্মী এক পুরুষের সাথে রঙ্গলীলায় মেতে উঠে নুরুন নাহার। 

 

যা নিয়ে হয় সালিশ বৈঠক। বদলি হয়ে বরিশাল এসে বিয়ে করেন কিশোর থেকে উঠতি বয়সি এক যুবককে। অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পর বিয়ে করেন এক প্রবাসীকে। যে সম্পর্ক এখনও চলমান রয়েছে। আর এই স্বামীর সহযোগিতায় অর্থ নিয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নুরুন নাহার।


প্রধান উপদেষ্টা সম্পাদকঃ মোঃ নুরুল ইসলাম ওমর, সাবেক এমপি ও বিরোধী দলীয় হুইপ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মাক্সুদুল আলম হাওলাদার

নির্বাহী সম্পাদকঃ এম নজরুল ইসলাম

ফোনঃ ০১৭১৭০১৬১৩০

যোগাযোগঃ অফিসঃ সাতমাথা, বগুড়া গাজীপুর অফিসঃ সিলমন, টঙ্গি, গাজীপুর

© 71 Vision ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সতর্কতাঃ অনুমতি ব্যতীত কোন সংবাদ বা ছবি প্রকাশ বা ব্যবহার করা যাবে না।