অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বার ২০২৫, সময়ঃ ০২:২৬
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া “মিজানের ভাতের হোটেল”-এর ভিডিও আমাদের সমাজকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ভাত-মাংসের টেবিলে শিক্ষিত-
অশিক্ষিত মানুষ সবাই একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, যেন এটি কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দৃশ্য, যেখানে মানুষ দীর্ঘ অনাহারের পর হঠাৎ খাবার পেয়ে প্রাণপণে লড়াই করছে।
কিন্তু সত্য হলো, এটি যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো দেশের ঘটনা নয়। এটি আমাদের রাজধানীর এক ছোট্ট রেস্টুরেন্ট, যেখানে কম খরচে গরিবদের জন্য ভাত-মাংস পরিবেশন করা হয়।
প্রশ্ন হলো—এখানে আসা মানুষেরা কি সবাই গরিব? উত্তর এককথায় দেওয়া কঠিন। কেউ হয়তো সত্যিই দরিদ্র, ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে এসেছেন; আবার কেউ এসেছেন কৌতূহল বা কম খরচে বেশি খাওয়ার লোভে।এই দৃশ্যে দুই ধরনের মানুষকে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই।
প্রথমত, শিক্ষিত মানুষ, যারা সভ্যতা ও শৃঙ্খলার পাঠ নিয়েও খাবারের লোভে ভদ্রতা ভুলে যান। সমাজে যাদের অবস্থান সম্মানজনক, তারা পর্যন্ত যখন থালাভর্তি ভাত নিতে গিয়ে অন্যকে ঠেলে সরিয়ে দেন, তখন প্রশ্ন জাগে—শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য কোথায় হারিয়ে গেল?
দ্বিতীয়ত, অশিক্ষিত ও দরিদ্র মানুষ, যাদের কাছে প্রতিদিন পর্যাপ্ত খাবার পাওয়া একটি বিলাসিতা। তাদের জন্য এই ভাত-মাংস পাওয়া মানে একরকম উৎসব। ফলে তারা স্বভাবতই “সংগ্রহ মানসিকতা” থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন।কিন্তু ঘটনা শুধু ক্ষুধা বা দারিদ্র্যের প্রতিফলন নয়।এটি আমাদের নৈতিক দেউলিয়াপনারও প্রতিচ্ছবি।
যখন শিক্ষিতরা অশিক্ষিতদের মতো আচরণ করে, তখন বোঝা যায়—ক্ষুধা শুধু পেটের নয়, মনেরও। নৈতিকতা ও মানবিকতার অভাব মানুষকে যে কোনো অবস্থায় লোভী ও অশৃঙ্খল করে তোলে।
মিজানের ভাতের হোটেল তাই শুধু এক টুকরো খবর নয়; এটি আমাদের সমাজের আয়না। এই আয়নায় আমরা দেখছি ক্ষুধা, লোভ, বিশৃঙ্খলা এবং শিক্ষার ব্যর্থতা। হয়তো একদিন এই দৃশ্য আমাদের মনে করিয়ে দেবে—আমাদের শুধু পেট ভরানোর খাবার নয়, মন ভরানোর শৃঙ্খলা ও নৈতিক শিক্ষারও জরুরি প্রয়োজন।
লেখক ও রাজনীতিবিদ ,মোঃআজিজুল হুদা চৌধুরী সুমন
© 71 Vision ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সতর্কতাঃ অনুমতি ব্যতীত কোন সংবাদ বা ছবি প্রকাশ বা ব্যবহার করা যাবে না।