অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ০৫ নভেম্বার ২০২৫, সময়ঃ ০৩:৫৫
৭১ ভিশন ডেস্ক:-মুসলমানদের জন্য আয় কেবল জীবিকার মাধ্যম নয়, এটি এক ধরনের ইবাদতের অংশ। Islam শিক্ষা দেয়, উপার্জিত অর্থ হোক হালাল, ন্যায়নিষ্ঠ ও সততার সঙ্গে অর্জিত।বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে হালাল উপার্জন সবসময় সহজ নয়। তবে হালাল উপার্জনের বরকত দুনিয়াতেও শান্তি এবং পরকালে সফলতার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসে।
হালাল রুজি মানে শুধু হারাম থেকে দূরে থাকা নয়; এটি সততা, ন্যায়পরায়ণতা এবং সমাজের কল্যাণে অবদান রাখা। নিচে আয়ের জন্য ১৩টি বাস্তবমুখী এবং প্রয়োজনীয় নিয়ম তুলে ধরা হলো—
১. ব্যবসায় নৈতিকতার সীমানা মেনে চলা
ইসলাম প্রতিটি লেনদেনে স্বচ্ছতা, ন্যায় ও সততার নির্দেশ দেয়। দাম বাড়িয়ে কারসাজি, অন্যায় প্রতিযোগিতা বা মানুষের দুর্বলতা কাজে লাগানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। চুক্তি স্পষ্ট রাখা ও নিয়মিত ব্যবসার নৈতিক মূল্যায়ন করা মুসলিম ব্যবসায়ীর কর্তব্য।
২. প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সেবা দেওয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘ইহসান’ বা শ্রেষ্ঠত্বের শিক্ষা দিয়েছেন। গ্রাহকের প্রত্যাশার চেয়ে উন্নত মানের পণ্য বা সময়মতো সেবা দেওয়াই ইসলামের ব্যবসায়িক আদর্শ। এতে শুধু বরকতই নয়, আস্থা ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কও গড়ে ওঠে।
৩. জুয়া ও জল্পনামূলক ব্যবসা থেকে দূরে থাকা
জুয়া বা ‘মাইসির’ এবং অনিশ্চয়তা বা ‘গারার’ ইসলামে নিষিদ্ধ। লটারিতে বিনিয়োগ, বেটিং বা অতি-ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেডিংয়ের পরিবর্তে বাস্তব উৎপাদনমূলক খাতে বিনিয়োগ করাই উত্তম। যেমন—হালাল শেয়ারবাজার, সম্পদভিত্তিক ব্যবসা বা রিয়েল এস্টেট।
৪. হারাম পণ্য বা সেবার সঙ্গে যুক্ত না থাকা
মদ, শূকরজাত দ্রব্য কিংবা সুদভিত্তিক আর্থিক সেবা কোনোভাবেই ইসলামে বৈধ নয়। উৎপাদন, পরিবহন বা প্রচারণা—কোনো ধাপেই এসবের সঙ্গে জড়িত থাকা চলবে না। এর বদলে হালাল ফুড, ইসলামী ফাইন্যান্স বা মার্জিত ফ্যাশন খাতকে বেছে নেওয়া যেতে পারে।
৫. সততা বজায় রাখা
সততা ইসলামী ব্যবসায়িক নীতির মেরুদণ্ড। পণ্যের মান সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি বা অতিরঞ্জন ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। প্রতিটি লেনদেনে সঠিক দলিল ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা উচিত।
৬. বেআইনি বা অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকা
কর ফাঁকি, চোরাচালান বা আইন ফাঁকি দেওয়ার মতো কাজ ধর্মীয় ও নাগরিক উভয় দৃষ্টিকোণেই অপরাধ। নিয়ম মেনে চললে ব্যবসার সুনাম ও স্থায়িত্ব দুই-ই বাড়ে।
৭. ঘুষ ও দুর্নীতি থেকে দূরে থাকা
ঘুষ বা ‘রিশওয়া’ ইসলামে কঠোরভাবে হারাম। ন্যায়ের পরিবর্তে সুবিধা আদায়ে ঘুষ দেওয়া বা নেওয়া দুটোই অন্যায়। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালা ও জবাবদিহিতা গড়ে তুলতে হবে।
৮. বিজ্ঞাপনে বাস্তবতা বজায় রাখা
বাজারজাতকরণে কখনোই মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত দাবি করা যাবে না। বিজ্ঞাপনে যতটা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে, বাস্তবেও তা পূরণ করতে হবে। এতে বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রাহক আস্থা বৃদ্ধি পায়।
৯. আলেমদের পরামর্শ নেওয়া
নতুন আর্থিক খাত, যেমন ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ফিনটেক বিষয়ে আলেমদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এতে সন্দেহজনক কোনো খাতে যুক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা কমে।
১০. নৈতিক ভোক্তা হওয়া
শুধু উপার্জন নয়, খরচেও ইসলাম নৈতিকতা শেখায়। এমন প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটা করুন, যারা শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করে, পরিবেশের ক্ষতি করে না এবং হালাল নীতিতে চলে।
১১. পারিবারিক ও সামাজিক দায় পরিশোধ
পরিবারের খরচ, কর্মচারীর বেতন, কর ও যাকাত যথাসময়ে পরিশোধ করা ঈমানের অংশ। মজুরি বিলম্ব ইসলাম কঠোরভাবে নিন্দা করেছে।
১২. সবার প্রতি ন্যায় ও সমতা রক্ষা
চুক্তি, মুনাফা বা কর্মক্ষেত্র—সবক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার বজায় রাখতে হবে। কর্মচারী, গ্রাহক বা অংশীদার—সবার সঙ্গে সমান আচরণই ইসলামী শিক্ষার প্রতিফলন।
১৩. আয় থেকে দান করা
দান বা ‘সদকা’ ধন-সম্পদকে পবিত্র করে। দরিদ্র, এতিম, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবায় নিয়মিত অনুদান দেওয়া ইসলামী শিক্ষা ও জীবনের অপরিহার্য অংশ।
হালাল রুজি শুধু বৈধ উপার্জন নয়, এটি আত্মিক শান্তি, নৈতিকতা ও সমাজকল্যাণের পথ। এসব নীতিতে অটল থেকে একজন মুসলমান দুনিয়ার সাফল্যের পাশাপাশি পরকালেও পুরস্কৃত হতে পারেন। হালাল আয়ের লক্ষ্য শুধু অর্থ উপার্জন নয়—এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক মহান প্রয়াস।
সূত্র : হালাল টাইমস
© 71 Vision ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সতর্কতাঃ অনুমতি ব্যতীত কোন সংবাদ বা ছবি প্রকাশ বা ব্যবহার করা যাবে না।