বিরামপুর সেটেলমেন্ট অফিস ঘুষ–বাণিজ্য ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভয়ারণ্য

অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বার ২০২৫ | সময়ঃ ১১:১১
photo

মোকছেদুল মমিন মোয়াজ্জেম, দিনাজপুর প্রতিবেদক:-দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে চলছে ঘুষ–বাণিজ্য, অনিয়ম–দুর্নীতি আর দালালদের দৌরাত্ম্য। অভিযোগ উঠেছে ১৮ একর সরকারি খাস জমি টাকার বিনিময়ে মালিকানা করে দেওয়া, পর্চা ও নকশা সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে তিনগুণ দামে বিক্রি করা এবং মাঠ জরিপের নামে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার। এসব ঘুষ-দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে দালাল খাদেমুল, মোস্তফা, জাভেদ বিহারি, নাজমুল, আরিফ এবং নৈশপ্রহরী মুনসুর আলীর সহযোগিতায় অফিসের ড্রাফ্টসম্যান সাইদুল ইসলাম।

 

কসবা সাগরপুর মৌজায় তদন্তে জানা যায়, প্রায় ১৮ একর সরকারি খাস জমি নিয়ম–নীতির তোয়াক্কা না করে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে পর্চা করে দেওয়া হয়েছে।এ কাজে মূল ভূমিকায় রয়েছেন ড্রাফ্টসম্যান সাইদুল ইসলাম ও তার সহযোগী দালাল খাদেমুল।

 

উপজেলার বগরা, গংগাদাসপুর, শৈলান ও গংগাপুর মৌজায় গিয়ে দেখা যায়, সরকারি নির্ধারিত ১০০ টাকার পর্চা বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকায়, আর ৫০০ টাকার নকশা বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকায়। শুধু তাই নয়, মাঠ জরিপের সময় স্থানীয়দের কাছ থেকে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে সরকারি আসল পর্চার ফটোকপি, যেখানে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারের সই–সিল ব্যবহার করা হয়েছে। তবে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সেবাগ্রহীতারা অফিস থেকে পর্চা সংগ্রহ করবেন। মৌজায় গিয়ে পর্চা বিক্রির কোন নিয়ম নেই। এসব নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে দালালদের সহযোগিতায় মৌজাগুলোতে গিয়ে পর্চা বেশি দামে বিক্রি করেছেন ড্রাফ্টসম্যান সাইদুল ইসলাম।

 

উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের বগরা মৌজার আমিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামে এসে সাইদুল ইসলাম ও নৈশপ্রহরী মুনসুর আলী প্রতিটি পর্চা ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছে। এছাড়াও নকশা নিয়েছে ৭০০ টাকা। দুই মৌজায় প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার পর্চা বিক্রি করেছে তারা।

 

উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের গংগাদাসপুর মৌজার উজ্জ্বল জানান, আমি পাঁচটি পর্চা নিয়েছি ১৫০০ টাকায়। নকশার জন্যও ৭০০ টাকা নিয়েছে। জরিপের সময় মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা আদায় করেছে।

 

এছাড়াও ঐমৌজার আব্দুল রাজ্জাক, রফিজ উদ্দিন ও আকবর আলীসহ অনেকেই বলেন, আমরা বিরামপুর সেটেলমেন্ট অফিস থেকে প্রতারণার শিকার হয়েছি। তারা আমাদের গ্রামে এসে ১০০ টাকার পর্চা ৩০০ টাকা করে বিক্রি করে গেছে। তাহলে হাজার হাজার পর্চায় তারা কত টাকা বেশি নিয়ে গেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার চাই।

 

উপজেলার মকুন্দপুর ইউনিয়নের গংগাপুর মৌজার অভিযোগকারী আজমল হোসেন, আবুল হোসেন, রোহান, আনিছুর রহমান ও মংলু সহ অনেকেই বলেন,
বিরামপুর সেটেলমেন্ট অফিসে কাজ করে আমাদের এলাকার মোস্তফা নামের এক ব্যক্তি। আমরা তার মাধ্যমে আমাদের পর্চা পেয়েছি। মোস্তফা বলে আপনাদের অফিসে যেতে হবে না। আমি এসে দিয়ে যাবো। প্রতিটি পর্চা সে ৩০০ টাকা করে নিয়ে গেছে। আমরা তো আর জানি না পর্চার সরকারি মূল্য কত

বিরামপুর সেটেলমেন্ট অফিসের দালাল মোস্তফা বলেন, আমি সেটেলমেন্ট অফিসের কোন লোক না। এভাবে পর্চা বিক্রি করিনি।

বিরামপুর সেটেলমেন্ট অফিসের ড্রাফ্টসম্যান সাইদুল ইসলাম বলেন, তিনি পর্চা এবং নকশা বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেন। এছাড়াও খাস জমির বিষয়েও তিনি অস্বীকার করেন।

 

বিরামপুর সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, খাস জমির কোনো মালিকানা হবে না। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। পর্চা বেশি দামে বিক্রির বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।

 

বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুজহাত তাসনীম আওন জানান, খাস জমি আমাদের এখতিয়ারভুক্ত বিষয়। আমরা বিষয়টি দেখছি। তবে পর্চা বা অন্যান্য অনিয়ম সংশ্লিষ্ট দপ্তরই ব্যবস্থা নেবে।

 

এবিষয়ে দিনাজপুর জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, ড্রাফ্টসম্যান সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস দালালমুক্ত করা হচ্ছে। বিরামপুর সেটেলমেন্ট অফিসেও দালাল মুক্ত করা হবে।

অতিরিক্ত টাকা আদায় ও সরকারি খাস জমি বেচাকেনার মতো গুরুতর অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

শেয়ার করুন