পীরগঞ্জ পৌরসভা বিজ্ঞপ্তির ৮ বছর পরেও নিয়োগ স্বচ্ছ হলো না ?

উৎকোচ গ্রহন, স্বজনপ্রীতি, গভীররাতে ফলাফল প্রকাশ, কিস্তিতে নিয়োগ প্রদান, নিয়োগ বাতিলের দাবীতে সোচ্চার পীরগঞ্জবাসী!
অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বার ২০২৫ | সময়ঃ ০৩:১০
photo

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি:-পীরগঞ্জ পৌরসভার ১২ টি পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৮ বছর পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মোছা: খাদিজা বেগমের বিরুদ্ধে কোটি টাকা উৎকোচ নিয়ে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর পৌর সচিব আব্দুর রহিমের ভাই ও ইউএনও'র ড্রাইভারের ভাইকে নিয়োগ দেয়া, গভীররাতে নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ, স্বজনপ্রীতি, কিস্তিতে নিয়োগ প্রদানের বিষয়টি পীরগঞ্জে "টক অব টাউনে" পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি নিয়োগটি বাতিলের দাবীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড় উঠেছে।

 

সংশ্লিষ্ট সুত্র ও অভিযোগে জানা গেছে, বিগত ২৭/৭/২০১৭ ইং দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় মেয়র এএসএম তাজিমুল ইসলাম শামীম পীরগঞ্জ পৌরসভার ১২ টি শুন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিলেও তা সম্পন্ন হয়নি। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলে পৌর মেয়র পালিয়ে যান। মেয়রের দোসর পীরগঞ্জ পৌরসভার সচিব আব্দুর রহিম উল্লেখিত পদগুলোতে নিয়োগ দিতে পৌর প্রশাসক ও পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাদিজা বেগমকে উৎসাহিত করে।  ফলে ৮ বছর পর গত ২১/৪/২০২৫ ইং দৈনিক ভোরের ডাক ও রংপুরের আখিরা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেন। পত্রিকাগুলো পীরগঞ্জেই আসে না। 

 

২য় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সর্বমোট ৩৬৩ জন আবেদন করলেও মাত্র ১৩৬ জনকে চাকুরীর প্রবেশপত্র দেয়া হয়। কর্মচারী নিয়োগ ও বাছাইয়ে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটির আহŸায়ক ইউএনও খাদিজা বেগম, সদস্য জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি সহকারী কমিশনার তমাল আজাদ, সরকারি শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজের অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিক সরকার, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ্ মোসলেম উদ্দিন এবং পৌর সচিব আব্দুর রহিম গত ৫ সেপ্টেম্বর পীরগঞ্জ পৌর সদরের কছিমন নেছা বালিকা বিদ্যালয়ে ওই নিয়োগ পরীক্ষা নেয়। লিখিত পরীক্ষার পরই সকলেরই মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ওইদিন গভীররাতে ১২ পদের স্থলে ৭ পদে ফলাফল দেয়। কিন্তু ৯ জনকে নিয়োগ দেখানো হয়।

 

এখনও ৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। কিস্তিতে নিয়োগ দেয়ায় পীরগঞ্জে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতি পদে ১২ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ বুঝে পাওয়ার পর নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

 

যারা এখনও উৎকোচের টাকা যোগাড় করতে পারেনি, তাদেরকে কিস্তিতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের রাতের ভোটের মতো গভীররাতে নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ, সবাইকে নিয়োগের প্রবেশপত্র না দেয়া, কিস্তিতে ফলাফল প্রকাশ ও নিয়োগ দেয়ার ঘটনায় পীরগঞ্জবাসী ক্ষোভে ফুঁসছেন। শুরু থেকেই অভিযোগ উঠলেও পৌর প্রশাসক ও ইউএনও তা তোয়াক্কা না করায় পীরগঞ্জবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। এখন মিছিল, মিটিং, সংবাদ সম্মেলন, গণ স্বাক্ষর কর্মসূচিসহ আদালতে রীট করার প্রস্তুতি চলছে বলে একাধিক সুত্র জানিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, যোগ্যতা ও মেধাকে উপেক্ষা করে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এতে ক্ষোভ ও হতাশায় ভুগছেন বঞ্চিত প্রার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিয়োগ কমিটির এক সদস্য বলেন, গভীররাতে নিয়োগের কোন সিস্টেম নয়। এতে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

 

আমরাও বিতর্কিত হয়েছি। নিয়োগের যাবতীয় অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে ঝড় তোলা বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান পল্টন বলেন, রাত দুইটা পর্যন্ত ফলাফলের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের কাজ করার এত আগ্রহ কেন? নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিভিন্নভাবে গোঁজামিল, আর্থিক লেনদেন, স্বজনপ্রীতি করায় নিয়োগটি বাতিলের জন্য আমরা সংবাদ সম্মেলন করে গণ স্বাক্ষর নিয়ে ইউএনও এবং জেলা প্রশাসককে দিবো। তারপর স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষার দাবী করবো। এটি না করা হলে বিতর্কিত নিয়োগ বাতিলের জন্য হাইকোর্টে রিট করবো। তারপরও নিয়োগ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। ইউএনও খাদিজা বেগম বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়েছে। দুর্নীতির সুযোগ নেই। কেউ দূর্নীতি করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মোঃ আকতারুজ্জামান রানা
পীরগঞ্জ(রংপুর) প্রতিনিধি

শেয়ার করুন