মেটলাইফের গবেষণা: কর্মীদের উৎপাদনশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য

অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ৩০ অক্টবার ২০২৫ | সময়ঃ ০৪:১৬
photo

[ঢাকা, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫] মেটলাইফ বাংলাদেশ সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ‘এমপ্লয়ি বেনিফিট ট্রেন্ডস স্টাডি’ (ইবিটিএস) শীর্ষক একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে, যেখানে দেশের বেসরকারি খাতের কর্মী ও নিয়োগদাতাদের বিভিন্ন চিন্তাধারা, চ্যালেঞ্জ এবং প্রত্যাশা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। 
 

গবেষণায় দেখা গেছে, আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং পর্যাপ্ত আর্থিক সুযোগ-সুবিধার অভাব কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহ ও কর্মদক্ষতা হ্রাস করে এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেসব প্রতিষ্ঠান একটি শক্তিশালী ও দক্ষ কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে চায়, তাদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 

ইবিটিএস জরিপে তৈরি পোশাক, ব্যাংকিং, এফএমসিজি, টেলিযোগাযোগ এবং এনজিওসহ বিভিন্ন খাত থেকে ৫৭১ জন কর্মী এবং ১৪২টি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের মতামত নেওয়া হয়েছে। কর্মীদের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেন তাদের কর্মীদের জন্য আর্থিক ও অনার্থিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আরও ভালোভাবে সাজাতে পারে, সেই লক্ষ্যেই দেশে এই প্রথমবারের মতো এমন একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।

 

গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলসমূহ:
•আর্থিক চাপ কর্মদক্ষতার নীরব ঘাতক
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫৬ শতাংশের বেশি কর্মী বলেছেন, আর্থিক দুশ্চিন্তা তাদের কাজের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। ৪১ শতাংশ মনে করেন, আর্থিক চাপের সঙ্গে মানসিক অসুস্থতার সম্পর্ক রয়েছে। তবে ৬৭ শতাংশ কর্মী তাদের বর্তমান আর্থিক অবস্থার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
 

•অবসর নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই
৫৩ শতাংশের বেশি কর্মীর অবসর নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই এবং প্রায় অর্ধেক কর্মী চান, নিয়োগদাতারা যেন অবসর-পরবর্তী আয়ের জন্য সঞ্চয় ব্যবস্থায় সহায়তা করেন।
 

কর্মীদের প্রতি যত্নের কোনো বিকল্প নেই
৭২ শতাংশ কর্মী মনে করেন, তাদের প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতি যত্নবান হলেও সার্বিক কল্যাণ ও সহায়তা প্রদানে এখনও ঘাটতি রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও ভালো কর্মসংস্কৃতি গড়ে তোলে, তারা সহজেই কর্মীদের সম্পৃক্ততা এবং প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘমেয়াদি কাজ করার হার বাড়াতে পারে।
 

•সুবিধা দিলে কর্মীদের আনুগত্য বাড়ে, কিন্তু বাস্তবে এর ঘাটতি রয়েছে৭৮ শতাংশ কর্মী বলেছেন, বীমা ও মানসিক স্বাস্থ্যের মতো সুবিধা তাদেরকে প্রতিষ্ঠানের প্রতি আরও বেশি আনুগত্যশীল করে তোলে। কিন্তু এসব সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিষ্ঠানে ঘাটতি রয়েছে, যা কর্মীদের আস্থার অভাব সৃষ্টি করে। তবে, এসব সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলতে পারে।
•যোগাযোগ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
 

৭০ শতাংশ কর্মী বলেছেন, অন্যরা কীভাবে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সুবিধা থেকে উপকৃত হচ্ছে তা জানা থাকলে, তারাও সেগুলোর ব্যবহার করতে পারতেন। এটি বোঝায় যে, প্রতিষ্ঠানগুলোতে সারা বছর স্পষ্ট, ব্যক্তি-ভিত্তিক এবং নিয়মিত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
 

বাংলাদেশের নিয়োগদাতারা ক্রমাগতভাবে বুঝতে পারছেন যে কর্মীদের সুবিধা প্রদান ব্যবসার পারফরম্যান্সের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। নিয়োগদাতাদের মধ্যে প্রায় ৫৬ শতাংশ বলেছেন, কর্মীদের উৎপাদনশীলতা  বজায় রাখা তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, এবং ৪৯ শতাংশ বলেছেন, কর্মীদের সম্পৃক্ততা 

 

(engagement) বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। গত এক বছরে ৫১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দক্ষ কর্মীদের ধরে রাখতে এবং মনোবল বাড়াতে কর্মীদের সুবিধা প্রদানে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।

 

এছাড়াও, ৭৮ শতাংশ নিয়োগদাতা মনে করেন, কর্মীদের সুবিধা প্রদান কর্মস্থলের সংস্কৃতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে অনেকেই বলেছেন, বর্তমান সুবিধাগুলো কর্মীদের মানসিক চাপ বা আর্থিক বোঝা তেমন কমাতে পারছে না। এ থেকে বোঝা যায়, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এখনই। কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা থাকা এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে বিনিয়োগ করা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং এটি একটি অপরিহার্য প্রয়োজন। এভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের আস্থা অর্জন করতে পারে, তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে এবং একইসাথে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।
 

বাংলাদেশের বেসরকারি খাত এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়, চাকরির কঠিন প্রতিযোগিতা এবং মানসিক চাপ কর্মীদের ওপর প্রভাব ফেলছে।এমন সময়ে কর্মীরা শুধু বেতন নয়, তাদের সার্বিক ভালো থাকার নিশ্চয়তাও চান। গবেষণায় দেখা গেছে, আর্থিক সুস্থতা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং ভালো পারফরম্যান্সের জন্য এটি একটি অপরিহার্য সূচক।
 

মেটলাইফ বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আলা আহমদ বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, আর্থিক চাপ ও পর্যাপ্ত সুবিধার অভাব কর্মীদের উৎপাদনশীলতা ও মনোবলকে দুর্বল করে।”তিনি আরও বলেন, “এখন নিয়োগদাতাদের সামনে দারুণ সুযোগ রয়েছে। কর্মীদের বিস্তৃত সুবিধা দেওয়া, তাদের জন্য যত্নবান সংস্কৃতি তৈরি করা এবং যোগাযোগ উন্নত করার মাধ্যমে তারা নিয়োগদাতাদের মধ্যে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেন। এই উদ্যোগ একইসাথে বিশ্বস্ততা বাড়াবে এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে।” 

শেয়ার করুন